জগন্নাথপুরের ডাক ডেস্ক::
গত কয়েক বছর ধরেই কোরবানি ঈদের পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে সংকট চলছে। এবারও সেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনার ছোবলে চাহিদা কমে যাওয়া এবং দেশের ভেতরে করোনার বিস্তারের সঙ্গে বন্যার ছোবলে এই শঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
তবে সংকট মোকাবেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া রফতানির আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে উচ্চপর্যায়ের কমিটি। উদ্যোক্তারা বলছেন, এবারও গত কয়েক বছরের শঙ্কাই দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। বরং এবার পশুর চামড়ার দাম নিয়ে সংকট আরও বেশি হতে পারে। গতবারের তুলনায় এবার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে চামড়ার চাহিদা আরও কমে গেছে।
কথা হয় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্ব ও অভ্যন্তরীণ বাজার বিশ্লেষণ করে এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীতে চামড়ার দাম বিশ্ববাজারে কমবে-এমনটিই ধরে নেয়া হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বাজার ভালো না হলে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট-ব্লু রফতানির সুযোগ দেয়া হবে। সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে এক ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম এতটাই কমে গিয়েছিল যে, চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। মূল্যবান চামড়া অনেকেই মাটিতে পুঁতে রাখেন, ফেলে দেন ময়লার ভাগাড়ে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সারা দেশে হইচই পড়ে যায়। কথা হয় বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারও চামড়ার বাজার ভালো হবে না। তবে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত ঋণ দেয়া না হলে গতবারের মতো অবস্থা হতে পারে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, এখনও ট্যানারিগুলোয় ৩২শ’ কোটি টাকার চামড়া অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। বিশ্ব বাজার পরিস্থিতি ভালো নয়। সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, সে অনুযায়ী ট্যনারির মালিকরা চামড়া কেনাকাটা করবেন।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশে ১ কোটির কিছু বেশি পশু কোরবানি হয়।
এবার কোরবানির ঈদের জন্য সারা দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে। তবে এ বছর মহামারীর কারণে পশু কোরবানি গতবারের তুলনায় কম হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। গবেষকদের মতে, দেশে কোরবানির পশুর খামার বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ৭ লাখ কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত কোরবানি যদি কমই হয়, তাহলে উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা আরও বাড়বে।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ ২৯ ভাগ কমিয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫-৪০ টাকা, ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য ছিল ৪৫-৫০ টাকা এবং মফস্বলে ৩৫-৪০ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে এবার ১৩-১৫ টাকা, গত বছর ছিল ১৮-২০ টাকা। বকরির চামড়া ১০- ১২ টাকা, গত বছর ছিল ১৩-১৫ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার অন্যতম আমদানিকারক চীন এখন চামড়া নিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চামড়ার পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার কারণেও দেশটিতে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।
ফলে বাংলাদেশ থেকে চীনে যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয় তা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাবে। এর পেছনে কোভিডও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে না।
Leave a Reply