মোঃ আব্দুল শহীদ সুনামগঞ্জ ::
সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চারিদিকে শোভা পাচ্ছে রোপা-আমন ধান। যেদিক চোখ যায় সেদিকে বাতাসে দুল খাচ্ছে সোনালী ধান আর ধান। ধানের ফলন ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। তবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন সংলগ্ন দেখার হাওরে পানি সংকটের কারণে বোরো ফসল নিয়ে হতাশ সুনামগঞ্জের কৃষকরা।
অগ্রাহায়নের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সদর উপজেলা,দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতক উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা আমন ধান কাটা শুরু করেছে।
তবে পুরো জেলায় ধান পাকা ও কাটা শুরু হতে ৭থেকে১০ দিন আরো সময় লাগবে। সরজমিনে মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চলতি বছর আমন ধানের ফলন ভাল হলেও এ বছর শত শত হেক্টর বোরো জমি পানি সংকটের কারণে পতিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সদর উপজেলার জলালপুর গ্রামের কৃষক নেতা সাবেক মেম্বার মো হাবিবুর রহমান বলেন, দেখার হাওরে আমার প্রায় ৭০/৮০ কেয়ার বোরো জমি রয়েছে। কিন্তু দ্রুত জমির পানি নেমে যাওযায় শত শত হেক্টর জমি পতিত থাকবে। দেখার হাওরের বড়দই জলমহাল থেকে ৬ ঘোড়া ৪টি পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে পানির ব্যবস্থা করেছি। তাতে জমির উৎপাদন খরচ দিগুন হবে। কৃষকরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্রম -ঘাম জড়িয়ে ফসল উৎপাদন করছে কিন্তু তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।
সরকার তাদের উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচ যাচাই-বাচাই করে বাজারে দর বাড়ানো সহ হাওরের খাল খনন,সুইচ গেইট নির্মাণ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানান।
লালপুর গ্রামের কৃষক হাফেজ মাওলানা ফেদাউর রহমান বলেন গ্রাম্য মহাজন থেকে ধার-দেনা করে টাকা নিয়ে ৬ কেদার জমিতে আমন আবাদ করেছি ফলন ভাল হলেও বাজারে ধানের দর ভালো পাওয়া না গেলে কি ভাবে দেনা পরিশোধ করবো।
আর সংসারের ভরন-পোষণ ও ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ কি ভাবে চালাবো তা ভেবে পাচ্ছিনা।
এদিকে দেখার হাওরে আমাদের একমাত্র বোরো ফসল পানি সংকটের কারণে কয়েক হাজার একর জমি পতিত থাকবে মনে হচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তর দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পতিত থাকার সম্ভাবনা শতভাগ।
স্থানীয় কৃষক উকিল মিয়া ও মনির উদ্দীন বলেন গ্রাম্য এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় অধিক মজুরি দিয়ে জমিতে চাষা দেওয়া ও বোরো ফসলের চারা রোপন করেছি। রোপন করার আগে যদি দেখতাম পানি সংকট তাহলে ৪ শত টাকা দামের বীজ এনে রোপন করতাম না।
আমার মত শত শত কৃষক বোরো ফসল নিয়ে দিন রাত দুশ্চিন্তায় আছে।
অপরদিকে সারের মুল্য বৃদ্ধি না হলেও জমি চাষাবাদ কীটনাশক কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্র পাতি মুল্য বেড়েই চলছে ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় বিভিন্ন হাট -বাজার ঘুরে দেখা যায় ২৯ এবং ২৮ জাতের ধান প্রতি মন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে যাহা কৃষকের উৎপাদন খরচ এর চেয়ে কম।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ৮১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ লক্ষ মাত্র নির্ধারন করা হয়েছে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদিত হলে অর্জিত ধান উৎপাদন হবে ৮২ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন।
তিনি আরো বলেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকায়,সময় মতো সার,বীজ, কীটনাশক বিতরণ করায়,ধান গাছে রোগ বালাইয়ের প্রকোপ দেখা না দেয়ায়, আমন ধানের বাম্পার ফলন যেহেতু হয়েছে কৃষক তার উৎপাদণের বাড়িত খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে।
এদিকে শুনেছি দেখার হাওরের পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এতে করে বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
Leave a Reply